শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

অন্যরকম সম্পর্কের গল্প

সবে মাত্র সন্ধ্যে,৮টা বাজে।এখনো রাতের খাবার খাইনি।ঘরে বোরিং লাগছে কিছুটা তাই বেড়িয়ে ঊঠোনের আম গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। সামনে টা রাস্তা।ফোন টিপছিলাম,ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিবো ভাবছি। দেখি সামনে দিয়ে ৩টা বিড়াল আর ৫/৬টা ইঁদুর একসাথে যাচ্ছে...
আমার চোখ ২টা বেড়িয়ে পড়ার মত অবস্থা।এ কি দেখছি আমি! বিড়ালের ভয়ে যেখানে ইদুর দৌড়ায় সেখানে একসাথে কাধে কাধে হাটছে?
কোনো কিছু না ভেবেই..'এই যে বিড়াল মশাই! সবাই মিল্লা কই যাইতাছেন?"
'যাচ্ছি একটা শুভ কাজে,পিছন থেকে ডাকলে কেন বাপু? এইবার যদি অমংগল কিছু হয়, সব দোষ তোমার " একটা বিড়াল উত্তর দিল,মনে হচ্ছে এদের সবার নেতাই এটা।
'যাক বাবা আমি আবার কি করলাম? যে বিড়াল আমাদের সামনে দিয়ে গেলে আমরা বলি শনি লাগছে আজ সেই বিড়াল বলছে পিছন থেকে কেন ডাকলাম

একটা ইদুর উঠে জিজ্ঞেস করলো "এই তুমার নাম কি?"
'আমার নাম সাজু'
পিছন থেকে কালো বিড়াল টা হেসে হেসে বললো "সে কি! দেখে তো মেয়েদের মত লাগছে, নাম টা এমন কেন!'
রাগ উঠে গেল মাথায়, আমারে নিয়া ফাইজলামি তাও আবার এই পিচ্ছি বিলাই,
আবার বললাম "হ,পোড়া কপাল আমার,সবাই তো এইডা কইয়া ই ডাহে,আমি কি করমু?
যাউগ্যা হেই কতা,তোমরা হগ্যলে মিল্লা কই যাইতাছো এইডা কও?
সামনের ইঁদুর টা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো "আপু আর বলবেন না এই যে উনাকে দেখছেন(নেতা মত দেখতে বিড়ালটিকে দেখিয়ে) উনার জি এফ খরগোশ কে নিয়ে কাঠবিড়াল ঝামেলা করছে,তার ই বিচার হবে এখন, সবাই মিলে ওখানে যাচ্ছি"
আমি নিজের গায়ে একটা চিমড়ি কেটে দেখলাম, হুম স্বপ্ন না সত্যিই তো কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? বিড়ালের সাথে খরগোশ আবার কেমনে প্রেম করে! হায় আল্লাহ আরো কত কিছু দেখমু
"ওহ আচ্ছা,তো কোথায় বিচার হচ্ছে? "
'ওই সামনের ঝোপের পিছনে, আপনিও আমাদের সাথে চলুন না!'
অফার টা মিস করার কোনো মানে নেই।'হুম,চলো আমিও যাবো' চললাম সবার সাথে
বিচারক সিংহ উঁচু একটা কাঠের টুকরোর উপর বসে।তার বাম পাশে খরগোশ মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে,চোখ দেখে মনে হচ্ছে কয়েকরাত ঘুমায়নি,হয়ত বিড়ালের টেনশনে, ডান পাশে কাঠবিড়াল দাঁড়িয়ে রাগ রাগ ভাব।
আমরা গিয়ে সভায় হাজির।আমি এক পাশে দাঁড়ালাম। দর্শক তো অনেক,ইদুর,বিড়াল খরগোশ, কাঠবিড়ালী,কুকুর সবাই যার যার বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসছে।বিচার শুরু হলো....
প্রথমেই কাঠবিড়াল হাত তুলে দাঁড়ালো 'ইউর অনার,খরগোস কে বলুন আমাকে মেনে নিতে'
'না কক্ষনোই না,জিবন চলে গেলেও আমি তকে বিয়ে করবো না শয়তান' খরগোশ বলে দিল সাথে সাথে।
'চুপ থাক,তুই খরগোশ হয়ে কিভাবে একটা জঘন্য প্রানী বিড়ালের সাথে প্রেম করিস? একবার বিড়ালের দিকে তাকিয়ে দেখ ও দেখতে কত বিচ্ছিরি, আর আমি!! কত স্মার্ট! '
খরগোশ কেদেই দিলো 'তোমরা সবাই বিড়ালের রুপ দেখেছো কিন্তু আমি ওর মন টাকে দেখেছি,ওর মত তুমি কখনোই হতে পারবে না'
বিচারক দুজনকেই থামিয়ে দিল 'বিড়াল,তুমি কি বলো?"
এতক্ষনে বিড়াল মশাই মাথা তুলে জবাব দিল 'হুজুর আমি চাই খরগোশ সুখী হোক আর আমিও অকে ছাড়া থাকতে পারবো না'
কাঠবিড়াল বললো -আমি থাকতে তোদের মিলন কখনো হবে না,খরগোশ শুধু আমার,বিড়ালের সাথে খরগোশ কে মানায় না"
খরগোশ উত্তরে বললো -আমি সুইসাইড করবো তবুও বিড়াল ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না,আমার সব কিছু বিড়াল এর।
আমার খুব খারাপ লাগলো বিড়াল আর খরগোশ এর প্রেম দেখে 'হুজুর আমি কিছু বলতে চাই' সভায় বললাম।
কিন্তু কাঠবিড়াল আরো ত্যাজ নিয়ে বললো 'দেখেছিস সবাই,বিড়াল একা পারবে না বলে আবার সাথে করে মানুষের বাচ্চা কে নিয়ে আসছে"
পোড়া কপাল আমার কাঠবিড়াল এইডা কি হুনাইলো
সিংহ বেটা মনে হয় গভীর চিন্তায় পড়ে গেছে কি করবে! কোনো উপায় না পেয়ে রায় দিল 'প্রিয় ভাই বোনেরা,আগামীকাল আবার সভা হবে, বিচারের রায় কাল দেয়া হবে
'
আমি আর কি করবো, চলে এলাম বাসায়,শেষ যখন খরগোশ আর বিড়ালের দিকে তাকিয়েছিলাম,দেখলাম দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে কাদতেছে cry emoticon cry emoticon
আর কিছু কওয়ার নাই, ভালবাসার অধিকার সবারই আছে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন