শুক্রবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৬

মজার কম্পিউটার

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রি, আমার ভাল নাম সাজেদা আক্তার। লোকে অবশ্য সাজু বলেই ডাকে। ছোট থেকেই নাকি পাগলামো করি সে হিসেবে পাগলের খেতাব টা আমার অনেক আগে থেকেই পাওয়া হয়ে গেছে। কম্পিউটার নিয়ে গাটাগাটি রীতিমত আমার অভ্যাস ছিল। আব্বু একটা মাল্টিসেক্টর অফিসে চাকরি করতো, কাজের সুবাদে আমাদের বাসায় ২/৩টা কম্পিউটার থাকতো। আব্বু একটা দিয়ে কাজ করতো আরেকটা পড়েই থাকতো। আব্বু যখন কাজ করতো, পেছন দিকে দাড়িয়ে আমি চেয়ে থাকতাম। ভাবতাম-এটার মাথায় এত শব্দ কিভাবে জায়গা নিল,আর ঐ যে ইদুরের মত এটা টিপলেই মাথায় লেখা আসে কেমনে! আর গুটা গুটা এগুলোই কি? মাথায় হাজার চিন্তা! মথায় এমন কি আছে? আমি দেখবো, জানবো।

তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি।আব্বুকে গিয়ে জিজ্ঞেসা করলাম, আব্বু এটা এত লেখা কিভাবে পেলো? এর মাথায় এত জায়গা কই? এটা এত তারাতারি কিভাবে লিখে? আব্বু বললো - আম্মু রে,এটা হচ্ছে কম্পিউটার আর এটা দিয়ে সব করা যায়।
দুর,আব্বুর কথা শুনেতো পুরাই রাগ উঠে গেল। এটা যে কম্পিউটার এটা তো আমি নিজেই জানি, আর এটা যে সব কিছু করতে পারে সেটা ও তো আমি নিজেই দেখতে পাচ্ছি। আমার প্রশ্নের উত্তর শুনে কোনো ভাবেই খুশি হতে পারলাম না, বরং জানার ইচ্ছাটা আরো বেড়ে গেল,আমি নিজেই জেনে নিতে পারবো এর মাথায় কি আছে! তাই সুযোগ খুঁজতে লাগলাম।
একদিন আব্বু অফিসে চলে যাওয়ার পর দেখি আম্মুও বাজার করতে গেল। এই সুযোগ! আর ভাইয়াকে তো দেখলাম কোনো রকম ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে ভার্সিটি গেল। ভাইয়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভার্সিটিতে পড়তো। তাই ভাইয়ার নিজের ও একটা কম্পিউটার ছিল,কিন্তু সেটাতে হাত দিলেই পিটাতো। সেদিন কেউ বাসায় নেই। আব্বুর ড্রয়ার খুলে হাতুড়ি, প্লাস, স্ক্রু, প্লাস ইত্যাদি আরো কিছু নিলাম।
কম্পিউটার এর কাছে গিয়ে প্রথমে ইঁদুরের মত যন্ত্রটা হাতে নিলাম। কয়েকটা টিপ দিলাম, কি ব্যাপার! বাতি জ্বলে না কেন? ইচ্ছে মত টিপাটিপি করলাম, কিন্ত কই এর মাথায় ও তো কিছু আসছে না। রাগ উঠে যাচ্ছে। এইবার গুটা গুটা টুকরো গুলো কে দেখলাম, যেখানে a b c d অ আ ই ঈ লেখা, মাঝে মাঝে হাসতাম এটা ভেবে যে আব্বু এত বড় হয়ে এখনো a b c d নিয়ে থাকে।
অনেক অনেক ক্ষন যাবত টিপলাম কিন্তু মাথায় কোনো কিছু উঠছে না। রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। সব বাদ দিয়ে এবার ভাবলাম এত কিছুর দরকার নেই, এর মাথায় কি আছে আমার শুধু সেটা জানলেই হবে। মাথাটাও কিছুতেই খুলতে পারছিলাম না তাই হাতুড়ি দিয়ে ভাংলাম বসে বসে কিন্তু দেখে তো আমি পুরোই চমকে গেলাম! মাথায় শুধু কয়েকটা ছোট খাটো যন্ত্র আর তারের বোঝাই, লিখা কই? আর পেলাম না!
বাসায় ফিরে সবকিছু দেখে আব্বু মারতে চেয়েছিল, কিন্তু আমাকে আর কই পায়? এক দৌড়ে এলাকা পার! ক্লাসের সবার কানে আমার এই কান্ডটা পৌছে গেল,আমাকে পাগল বলে ডাকতে তাদের আর কোনো সমস্যাই রইলো না।
যাইহোক এখন আমি জানি ইদুরের মত দেখতে ছোট যন্ত্র টা আসলে মাউস যা মনিটরে কাজ করার নির্দেশনা দেয়,আর ঐ যে গুটি গুটি তে a b c d লেখা সেটা হচ্ছে কি বোর্ড যা দিয়ে মনিটরে লেখা হয়। আর ছোট বেলাকার সেই মাথাটিই হচ্ছে মনিটর। এর আরো একটি অংশ হচ্ছে system unit যা দেখতে একটা বাক্সের মত। এইসব গুলো অংশকে একত্রে কম্পিউটার বলা হয়। কম্পিউটারে কাজ করা যায় অতি দ্রুত, এটি একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র।
এখন আমি জানি এটি দিয়ে কিভাবে কাজ করা হয় আর কিভাবেই এর মাথা মানে মনিটরে এত লেখা আসে কোথা থেকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন