শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

নীরব (২য় পর্ব)

পূর্ব প্রকাশের পর

বন্ধুদের সারপ্রাইজ পার্টি এঞ্জয় করে ৩টার দিকে বাসায় ফিরলাম। আম্মু তখনো সজাগ। একটু অবাক লাগার কথা থাকলেও অবাক হলাম না,আমার এক্সামের সময় হলে আম্মু আমার সাথে সারা রাত বসে থাকতো, আজ অনেক দিন পর আম্মু ৩টায় সজাগ।এতে তার প্রব্লেম হওয়ার কথা নয়।
কোথায় গিয়েছিলি এত রাতে?'
'আম্মু খুব ক্লান্ত এখন, কাল সকালে বলি প্লিজ?'
কিছু না বলে চলে গেল।খুব রেগে গেছে,না জিজ্ঞেস করে টাকা নিয়েছি বলে নাকি আংকেল এর গাড়িটা নিয়ে গেছি বলে আবার আম্মু কে এত রাতে এসে আন্টি জানিয়ে গেল! বুঝতেছিনা,রাগ করার তো অনেক কারন।কিসের জন্যে রাগ করলো? যাইহোক সকালে দেখা যাবে।

ঘুমাতে দেরি হলেও জাগতে দেরি হয়নি।যথারীতি ৮টায় আব্বু আম্মুর সাথে ডাইনিং টেবিলে দেখা।খুব ভয় হচ্ছে,দুজনকেই বাঘের মত লাগছে,এই বুঝি ঘাড় মটকে শরীর থেকে হাড় গুলো সব ছাড়িয়ে নিবে! আব্বুকে বরাবর এমন লাগে,আম্মুকে এই রুপে বেমানান লাগছে,উনার মায়াবী মুখের হাসি না দেখলে কি আর ভাল লাগে!
একটা রুটি নিলাম,ভয়ে ভয়ে একটু ছাড়িয়ে নিলাম।কে বলবে আমি মাস্টার্স কম্পলিট করা আধুনিক যুগের ছেলে? এত বড় হলেও বাবা মার চোখের দিকে তাকিয়ে এখনো কথা বলতে শিখলাম না! 
কিন্তু বর্তমান সময়ের বাচ্চারা আমি যেটুকু জানি তারা ছোট থেকেই বাবা মা কে প্রেসারে রাখে,চাহিদা পুরন না হলে না খেয়ে থাকে,রাগ করে।
আমার এই বয়সে এসেও যেটা আমি করতে পারছিনা।
নীরব?
আব্বুর মুখ থেকে ডাক টা শুনে হাত থেকে রুটির টুকরো টা পড়ে গেল।
'জ্বি, জ্বি বাবা,বলুন'
'তুমি নাকি আমার থেকে কিছু টাকা নিয়েছো?'
'সরি বাবা'
'আরে না,সরি কিসের! আমাদের ই উচিত এখন তোমার চাহিদা গুলো বুঝার চেস্টা করা' বাবা খুব সহজ গলায় বললো। 
'আমার সব চাহিদাই আপনারা পুরন করেছেন'
'হুম,তুমি বড় হয়েছো,বন্ধুদের সাথে চলা ফেরা করতে হয়,খরচ কিছুটা হবেই,তোমার যখন প্রয়োজন হবে, আম্মুর থেকে চেয়ে নিবে, ঠিক আছে?'
আমি খাওয়া বন্ধ করে মাথা নিচু করে বসে আছি।মনে হচ্ছে কোনো বাঘ না,ঠান্ডা মাথার মানুষের সাথে কথা বলছি।
'আমার কথায় তোমার খারাপ লাগতে পারে'
'না তেমন কিছু না'
'দেখো, তুমি যদি আমাদের না জানিয়ে কিছু করতে চাও তাহলে দেখবে আমাদের বলতে না পারায় তুমি নিজেই একটা অবসাদে ভুগছো,বাহিরের যন্ত্রণা ক্ষনস্থায়ী আর আরোগ্য কিন্তু ভেতরের যন্ত্রণা দীর্ঘস্থায়ী আর এটি ভেতর টাকেও শেষ করে দেয়,আমি আর তোমার আম্মু কেউ চাই না তুমি দুর্বলা হও'
বাবা খুব নরম গলায় বলে যাচ্ছে,আমার খুব ভাল লাগছে,বাবা বোধহয় এমনি হয়!
'হুম ঠিক আছে বাবা ' উত্তর দিলাম।
'সব ই খরচ করে ফেলেছো?'
এতকিছু বলার পর এটা জানতে চাইবে ভাবতে পারিনি।আমি এখনো কতটা ছোট আর দুর্বল বুদ্ধিসম্পন্ন সেটা আব্বু আম্মুর কাছে না আসলে বুঝতে পারবো না কখনো।
'পুরো টাকাটাই আছে'
'সে কি কথা! বন্ধুদের কাছে যাবে,কিছু তো খরচ হবেই'
'আমি আম্মুকে টাকা টা একটু পর দিয়ে দিচ্ছি'
আব্বু ভেবেছে কথাটা হয়ত রাগ করে বলছি
তাই গম্ভীর গলায় বললো 'না ফেরত দিতে হবে না,তোমার কাছে রেখে দাও,প্রয়োজনে ব্যবহার করবে'
কিছু বললাম না।
'হুম ঠিক আছে? আর পরবর্তীতে যেকোনো প্রয়োজনে আমার গাড়িটা নিয়ে যাবে'
আব্বুর খাওয়া শেষ, এটা বলেই উঠে গেল।
খুব লজ্জা লাগছিল,সত্যিই লজ্জার ব্যাপার। এই বয়সে এসেও লজ্জায় পড়তে হয় সেটাও নিজের বাসায় এটা ভাবতেই লজ্জা টা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেল...
আম্মু এতক্ষন কিছুই বলেনি।আব্বু চলে গেল।আম্মু আমার সামনের চেয়ার টায় বসলো।
আব্বু তো গেল,বেচে গেলাম কিন্তু আম্মু! হে আল্লাহ রক্ষা করো।
_বন্ধুদের সাথে বার্থডে সেলিব্রেট কেমন হলো?
_(আমার বার্থডের কথা মনে আছে,এটাইই অনেক) হুম খুব ভালো
_বন্ধুরা এত বড় সারপ্রাইজ দিল,তুমি কি দিয়েছো?
_রাতে সব দোকান বন্ধ ছিল,তাই কিছুই করতে পারিনি
_আজ দিয়ে দিবে তাহলে
_তোমাকে সারপ্রাইজ পার্টির কথা কে জানালো?
_আবির রাত ১টার দিকে ফোন দিয়ে জানালো পার্টির কথা, তোমাকে যেন কিছু না বলি
_(সব দিকে খেয়াল আছে আবিরের,আমার জানের দোস্ত কি আর স্বাদে বলি!) ওহ
_শুনলাম মেয়েরাও ছিল
_হুম,ওই তো রিয়া আর তার দুজন বান্ধবী
আমার খাওয়া ততক্ষনে কম্পলিট, তাই আম্মুকে বলে উঠে গেলাম।
যা ভেবে রেখেছি তার কিছুই হলো না, জন্মদিনে বাসায় কেক এর পরবর্তী তে অনেক কিছু খাওয়ার কথা! আবির সব কিছু থেকে বাচিয়ে দিল।
আজ সবাই কে ট্রিট দিতে হবে, ফোনে বলে দিতে হবে সেটা সবাইকেই.
নীরব রেডি বের হবে..

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন