বুধবার।বাড়িতে বিয়ে,শুক্রবার বিয়ের অনুষ্ঠান তাই এখনো সব আত্মীয় স্বজনদের আসা হয়নি।তবুও বাড়ির চারপাশের মানুষের ব্যাপক কোলাহল।একটু পর পর এক জন আসে,একজন চলে যায়।"এই তোরা কোথায় যাবি" সবার মুখে একি প্রশ্ন।
বিয়ে বাড়িতে এসে বিয়ে ছাড়া যদি গাড়ি পথে যেতে হয় তাহলে মুখে মুখে প্রশ্নের ভাজ আসা কোনো দোষের হবে না।
একটা রুমে রেডি হচ্ছে ফারিহা আর রুমা।ফারিহার সাজ অল্পতেই শেষ, দেরি যা হওয়ার তার জন্যে রুমাকে দোষ দিলেই যথার্থ।
সকাল ৬টায় ঘুম ভাংলো ফারিহার।প্রথম দেখা! মনে হাজার চিন্তা। যদি জহিরের সাথে দেখা না হয়,যদি জহিরের পছন্দ না হয়,জহির কি ওকে চিনতে পারবে? দেখা হলে দুজন কি বলবে? " ভাবছে ফারিহা। জহিরের সাথে প্রথম কথা রবি সার্কেল দিয়ে।এস এস সি কমপ্লেট করেই ফোন হাতে পেল ফারিহা।পরিক্ষা শেষ, রেসাল্ট এর তিন মাস কি করবে? শুরু হলো সার্কেল। স্কুল ফ্রেন্ডস ছাড়া কেউ নেই কথা বলার। সব ফ্রেন্ডস দের বি এফ আছে,কেবল ফারিহার নেই। ফারিহার এক ফ্রেন্ড বললো -আজ কাউকে প্রপোজ করে দেখ তো"
না,যদি কিছু হয়?"
আরে,কিছু হবে না,কপালে থাকলে বি এফ হবে " ফ্রেন্ড টি আশ্বাস দিয়ে বললো।
ফারিহাও আর কি করে,রাতে হঠাত একজন কে মেসেজ দিল "আপনাকে আমার পছন্দ, কিন্তু এ সম্পর্ক টা তো সম্ভব নয়,কি আর করার..."
ভেবেছিল হয়ত আর কোনো রিপ্লাই আসবে না।কিন্তু না,রিপ্লাই আসলো " ইচ্ছা থাকলে সব সম্ভব"
সেই থেকে শুরু ফারিহার নতুন পথ চলা জহিরের সাথে।সম্পর্কের প্রায় এক বছর,কেউ কাউকে দেখেনি। ফারিহার ২/১টা পিক যদিও বা জহির পেয়েছিল, ফারিহা দেখেনি।
শুরু হয় না দেখা ভালবাসা যার ভিত্তি কেবল বিশ্বাস আর একমুঠো চাওয়া।
ফারিহার খালাতো বোনের বিয়ে।সুযোগ দরজায় কড়া নেড়ে ডাকছে। সকালে ঘুমের ঘুরেই ফারিহা বললো -আসো আমরা দেখা করি"
জহিরও রাজি।আর কে আটকে রাখে!
হতে যাচ্ছে প্রথম দেখা....
চিন্তার একটা ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ঘুরে ঘুরে অলপ কিছু খেয়ে নিল ফারিহা। যে মেয়ে সন্ধ্যের আগে মায়ের বকুনি না শুনে গোসল করে না,সে মেয়ে সকাল সকাল গোসল করে নিল।ফারিহা প্রস্তুত।
জহির এখনো পৌছাতে পারে নি। চিন্তায় চিন্তায় মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে।তার উপর আরো চিন্তা চেপে বসছে- যদি জহিরের সাথে এটাই প্রথম আর শেষ দেখা হয়,তখন কি হবে? " না,আর ভাবতে পারছে না।
"কি রে তর হলো? " রুমার দিকে তাড়াহুড়োর প্রশ্ন ছুড়ে দিল।
রুমা ওর মামা তো বোন।বিয়ে বাড়ি থেকে একা তো আর বের হতে দিবেনা,রুমাকেই সাক্ষি নিল।দেখা করার বুদ্ধি টা যে তুমার মাথায় আগে আসছে সেটা স্বীকার করাই লাগে আর ওর সাহসেরও বাহবা না দিলেই নয়।
এইদিকে জহির বারবার ফোন দিচ্ছে "কোথায় আসবো? কোথায় দেখা করবে? কয়টায় বের হবে? " জানতে চাচ্ছে বারবার।
ফারিহা কিছু উপায় না বুঝে কল দিল এক ফ্রেন্ড কে। জহির একা আসে নি,বাড়ি অনেক দুর হওয়ায় সাথে কাউকে না নিয়ে আসলে নিরাপত্তায় সন্দেহ।
ফারিহার ঐ ফ্রেন্ড জহির আর তার ফ্রেন্ড কে নিয়ে বিয়ে বাড়ির মেইন রোডে অপেক্ষা করছে...
কি রে আর কত" ফারিহা জানতে চাইলো। রুমা সুন্দরি। দেখতেও ভাল,তাই ওর সৌন্দর্য আরেকটু বাড়াতে ওকে বেশিইই সাজগোজ করতে হয়।বারবার মুখ ধুয়ে নিচ্ছে আবার এসে মেকাপ দিচ্ছে।কিছুতেই মন ভরছে না।অন্য দিকে ফারিহার তো চিন্তায় চিন্তায় গলা শুকিয়ে পানি পিপাসা।
উফফ তুই কি এইবার যাবি নাকি আমি একাই চলে যাবো এখন" রাগি রাগি ফারিহা জিজ্ঞেস করলো।
রুমাকে নিয়ে রওনা দিল।বাসা থেকে বের হতে গিয়ে শত মিথ্যের বাহার সাজাতে হল,তবুও আপত্তি নেই ওকে তো দেখবো, আম্মু ভাইয়া জানতে পারলেই ১৬কলা পুর্ন। সব চিন্তাকে পেছনে ফেলে সামনে এগুচ্ছে দুজন।
একটু হাটতেই মেইন রোড। এক পাশে দাড়িয়ে রইল ফারিহা আর রুমা। চিন্তা যদিও ফারিহার বেশি কিন্তু রুমাই বেশি ঘেমে যাচ্ছিল। ফারিহা ভয়ের মধ্যেও রুমার জন্যে একটু হেসে নিল।
প্রথম দেখা...
ফারিহা দাড়িয়ে আছে।জহিরকে দেখা যাচ্ছে,সাথে আরেকজন ফেন্ড থাকায় ফারিহা বুঝতে ছিল না-জহির কোনটা হবে?
জানার আগ্রহ শেষ করে দিয়ে অবশেষে জহির এসে সামনে দাড়ালো
"কেমন আছো " একটা প্রশ্ন।
বাড়ির পাশেই দুজন। আত্মীয় স্বজন দেখে ফেলার ভয়।একটা সি এন জি নিল।পেছনের সিট গুলো ফারিহা,রুমা আর ফারিহার ফ্রেন্ড বরাদ্দ করে নিল আর ড্রাইভারের পাশে বসলো জহির।
সি এন জি চলছে,ফারিহার সামনে এখন সেই মানুষটি বসে যাকে সে ভালবাসে,যাকে নিয়ে হাজার স্বপ্ন মনের কিনারা ঘেষে চলাচল করে,যার জন্যে প্রেম আছে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।
জহির বাইরের দিকে তাকিয়ে,ফারিহার দৃষ্টি বাইরে তবে দৃশ্যমান সবকিছুই মনে।
হয়ে গেল বহু আখাংকিত প্রথম সে দেখা।
মাঝখানেরর সময়টা হয়ত নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করেই এগিয়ে চলেছিল তাইতো ণিমেষের মাঝে ফুরিয়ে গেল।
শত কথা জমানো, তবু বলা হয় নি।
চোখের মাঝে কল্পনার ভীড়, বুঝানোর সুযোগ হয় নি।
অবশেষে ইতি হল -নিশঃব্দ ২টা হাতের একত্রিত হওয়ার আনন্দ নিয়ে....
প্রথম দেখা সে তো প্রথম দেখাই...
চিন্তারা জোর সুরগোল করেও তা ভুলাতে পারবে না
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন