মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৬

সাজুর কথা

 বাসায় একা শুয়ে আছি।কাজ নেই।মাঝে মধ্যে ফেসবুকে যাচ্ছি,দেখা সাক্ষাত করে ফিরে আসছি।মজা নাই,লবন ছাড়া তরকারির মত। শুয়ে হুমায়ুনের "তিন পুরুষ " বইটা পড়ছি।এটা আমার না।সামিয়ার থেকে নেয়া হইছে।আমরা একি এলাকার, স্কুল,কলেজ,মসজিদ সবই এক।ভার্সিটি টা মনে হয় আলাদাই হবে।সমবয়সী আরো একজন আছে,ওরে অবশ্য সবাই নাচুনি বুড়ি বলেই ডাকি। আসলে ওর কথা শুনলে মনে হয়; ও আমেরিকা জন্মাইছে। হয়ত বাবা মা শখের বসে প্লেনে চঢ়ে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হইছে আর ও ভুলে বাংলাদেশে পড়ে গেছে।বড়ই দুঃখের ব্যাপার! 

আড্ডায় সবাই যখন আঞ্চলিক ভাষায় মজা করি তখনো ও হাত পা,শরীর নাচিয়ে নাচিয়ে কথা বলে।সবাই মজা নেয়,হাসে কিন্তু সে ব্যংগাত্মক হাসি ওর বুঝার বাইরে। সব ফ্রেন্ডস সার্কেলেই এমন কাউকে লাগে নইলে ফ্রেন্ডস আড্ডা গুলো আদি যুগের মাটির ফ্রেমে আটকে থাকা সাদা কালো ছবির মত হয়ে যাবে।
বইটা কিছুটা পড়া হয়েছে। হুমায়ুনকে আমার কখনো ভাল লাগে না।আর তার লেখা পড়ে যদি ভাল লেগে যায় সেটা কাউকে বলবো ও না।জানতে পারলে "হিমু পাগল " এর দলে ঢুকিয়ে দেবে,যা আমি চাই না।আমিও পাগল। আমার মতে, পাগল ২ধরনের হয়; এক ধরনের পাগল নিজেদের পাগলামি বলে দেয়, আরেক পাগল যা বলে সেটাই অন্যের কাছে পাগলের বলাপের মত লাগে; আমি নিজেকে এ দলেই ফেলবো।
আম্মু বাসায় নেই। খালাদের বাড়িতে কিছুদিন থাকবে। প্রতিবেশি ফুপু এসে ডাকছে "সাজু,চল মাদ্রাসার দিকে ঘুরে আসি" বই এর ভেতর স্কেল দিয়ে রেখে দিলাম।দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলাম।
ফুপুর বয়সটা খুব কম যাকে বলে ইয়ং লেডী। উনাকে ফুপু ডাকতে কিছুদিন আগেও অনেক আপত্তি ছিল, আপু কিংবা আন্টি ডাকতে পারলে ভেতর থেকে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ছাড়তে পারতাম যদিও আপু ডাকার বিষয়টা ভাবাও উচিত নয়।আপনারাও হয়ত পাগল বলবেন যদিও আমার কিছুই যায় আসে না; আমি এমনই। এক সময় আমার মনে হত যাদের বয়স বেশি,বুড়িদের মত তাদেরকে কেবল খালা,ফুপু,চাচি,মা ডাকে আর যাদের বয়স কম,দেখতে সুন্দরী,আধুনিকা তাদের ই আন্টি আপু ডাকতে হয় নইলে আধুনিকা কম বয়সী মেয়েদের ও ডাক শুনতে ভাল লাগেনা।
গেলাম হাটতে।দেখি, মাদ্রাসার হুজুর ক্রিকেট খেলছে ছাত্রদের সাথে। হুজুর হলেও যে ক্রিকেট খেলা যায়,বাচ্চাদের সাথে একি মাঠে হাটা যায়,তাদের সাথে মেশা যায় এটা আমার জানা ছিল না।"হুজুররা শুধু বেত মারতে পারে,বাচ্চাদের দিয়ে ওজুখানা/মসজিদ/বাথরুম/উঠোন ধুইয়ে নিতে পারে,সকালে পড়াতে পারে আর মেহমানদের বাসায় দাওয়াত খেতে পারে; পেট ব্যাথা হলে পানি পড়াও দেয় - ধারনা এটুকুই ছিল। নিজের এলাকায় ঘুরলে মজাই লাগে।সবই চেনা মানুষ।হাটার সময় দেখি সবাই তাকিয়ে থাকে হা করে,অনুভুতি অসম্ভব উল্টা পাল্টা থাকে তখন।মনে হয় যেন,আমি রানী ভিক্টোরিয়া হেটে যাচ্ছি। অবশেষে বাড়ি ফিরলাম এলাকা প্রদর্শনী শেষ করে। ভাবছি আরেকদিন বের হবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন