যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমাদের সমাজে ভিক্ষাবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ত মানুষরাও তাদের পোশাক, চাল চলন,ব্যবহার,এমনকি ভিক্ষা নেয়ার ধরনটাও পাল্টে নিয়েছে।সব কিছু উন্নত হচ্ছে, তাদের ভিক্ষাদ্বারাও উন্নত হচ্ছে। এই কিছুদিন আগেও ২টাকা পেলে ভিক্ষার্থী রা মাথা ছুয়ে আল্লাহরর দরবারে দোয়া করে যেত আর এখন ৫টাকা দিলেও মনে মনে কত বকা দেয় সেটা আল্লাহ পাক ই জানে।তাদের সন্তুষ্ট করা এখন খুবই কষ্টের ব্যাপার!
অনেকেই আছে ভিক্ষা দিতে কারপন্য করে,ভিক্ষুক এর সাথে খারাপ ব্যবহার করে,ওদের ঘৃণিত চোখে দেখে,ভিক্ষা দিতে চায় না_এগুলা যেমন সব মানুষ করে না,গুটি কয়েক করে তেমনি সব ভিক্ষুকও আসলে ভিক্ষুক নয়,ভিক্ষুক সাজার ভান করে টাকা ইনকাম করে যাদের বলা যায় আধুনিক ভিক্ষুক।
কয়েকটা ঘটনা বলি_____
ঘটনা ১: আমি আর আমার বি এফ একবার একটা পার্কে ঘুরতে গেলাম।একটু বসতেই কিছুক্ষন পর একটা পিচ্ছি ছেলে আসলো।'ভাইজান ২ডা টাহা দেন"
আমার বি এফ চাচ্ছিল না ছেলেটা বারবার আসুক এখানে,তাই ৫টা টাকা দিয়ে দিছে। কিন্তু কিছুক্ষন পর,সেই ছেলেটি আরো ২টা পিচ্ছি কে আমাদের পিছনে লাগিয়ে দিল।ওর ধারনা ওকে যখন দিয়েছে,নিশ্চয় বাকিদের দিবে।
ছেলেটি কি আসলেই ভিক্ষুক? কিংবা টাকার অভাবে খেতে পারে না এমন কেউ?
কখনোই না।এদের কে মাসে মাসে বেতন দিয়ে রাখা হয়,ভিক্ষা ওদের কাজ।এদের এ কাজের জন্যে প্রকৃত দুঃখীদেরই রাস্তায় না খেয়ে পড়ে থাকতে দেখতে হয়, কেউ এগিয়ে আসেনা,সবার ধারনা-এই ছেলেটিও অন্যের কথায় ভিক্ষা করে।
ঘটনা ২: একদিন দরজায় বসে ফোন টিপছি তখন একজন মহিলা আসলো, এক পাশে কোমড়ের সাথে ধরে রাখা পুটলি আর অন্য হাতে একটা ছবি বেশ বড় আকারেরই।একবার তাকিয়ে চোখ আবার ফোনের দিকে নিয়ে আসলাম। মহিলা নিজে নিজেই বলছিল -বইনা গো,টেহার অভাবে মাইয়াডার ওশুধ কিনতে পারিনা,কয়দিন আগে আগুনে পুইরা গেছে পুরা শরীর। বলেই কাদতে থাকলো।আমি কিছু বললাম না,ঘর থেকে বাটি করে চাল নিয়ে এসে দিলাম।কিছুক্ষন পড় আমার ফুফু এসে আমার আম্মুকে বলতেছে-জানো বউ,আজকে একটা মহিলা ভিক্ষা করতে আসছে,জামাই নাকি অনেক মারধর করে।
আমি হুট করেই জিজ্ঞেস করে বসলাম, আম্মা ঐ মহিলা কি হাতে শাড়ির একটা পুটলি নিয়ে আসছে?
হ্যা"
ঐ মহিলা ত আমারে বললো, মেয়ের নাকি শরির পুড়ে গেছে।
যাইহোক বুঝতে আর বাকি রইল না,কি হইছে।আসলে কিছুই হয় নাই।ভিক্ষাবৃত্তি এখন পেশা,আর এ পেশায় যে যেভাবে পারে টাকা নিচ্ছে আল্লাহর দোহাইও দিচ্ছে।কিচ্ছু করার নাই....
ঘটনা ৩: নারায়নগঞ্জে চিটাগাং রোড এ ২টা ওভার ব্রিজ আছে। প্রতিটা ব্রিজএর প্রথম থেকে শেষ অবধি কমপক্ষে হলেও ৬/৭জন ভিক্ষুক থাকে যারা কেউ নিজ থেকে এই ব্রিজে উঠে আসছে এটা বিশ্বাস করাও কঠিন। হয় কেউ দিয়ে গেছে এদের নইলে এদের ক্ষমতা নেই।
এরা সবগুলোইই কোনো না কোনো গ্যাং এর সদস্য বাহিনী। এক ফ্রেন্ড এর কাছে একবার শুনেছিলাম, ঢাকার দিকের ভিক্ষুকেরও নাকি ১৪তলা বিল্ডিং থাকে।কিভাবে ১৪তলা হল জিজ্ঞেস করিনি।উত্তর নিজেই খুজেছি,আর পেয়েও গেছি।এরাই সেই ভিক্ষুক যাদের বাসায় ২৪ঘন্টা শীতলীকরণ যন্ত্র লাগানো থাকে।
ঘটনা অনেক আছে।আধুনিক ভিক্ষুক সমাজ তো তাই এদের কথা বলেও শেষ হবে না।
মাঝে মাঝে বাসায় পিচ্ছিমত দেখতে ছেলে বা মেয়ে আসলে আমার আব্বুকে বলতে শুনি," এই তুই আমাদের বাসায় থেকে টুকটাক কাজ করবি,তর সারামাস খাওয়া পোশাক আমরা দিবো" আব্বু কিন্তু মজা করে বলে। আর পিচ্ছিরা শুনলেই এক দৌড়।
আব্বুও জানে এরা ভিক্ষুক নয়,এরা বিনা পরিশ্রমে টাকা আদায় কারী পেশাদার।
কে যে সত্যি না খেয়ে আছে তা এখন কারো পেট দেখেও বুঝা যায় না।মুহুর্তেই রুপ বদল।
সাধারন মানুষ থাকে ঘেরাকলে।এগুলা রে ভিক্ষা না দিলে বলে অমানুষ,ভিক্ষা দিলেও হাজার ভেংচি।
আর হে,আধুনিক ভিক্ষুক সমাজের সদস্যরা তো এখন আর ভিক্ষা করে না।ওরা শুধু সাহায্য চায়।
যাইহোক, সবাই সাহায্য করবো। সাহায্য প্রার্থী যে বেশেই থাকুক।
আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুক (আমিন)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন