রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৬

দারিদ্র্যের সন্তান

সকাল ৭.০০ টায় ঘুম থেকে উঠে কোনো রকম খেয়ে সেই পুরোনো কালো শার্ট টা গায়ে দিয়ে,মায়ের থেকে ৩০টাকা হাত খরচ নিয়ে রওনা দেয় রফিক।
আজ প্রায় ৭.৩০বাজতে চললো।রফিক এখনো ঘুম থেকে উঠে নি,মা আসলো ডেকে তুলতে...
_রফিক? বাবা? আজ কাজে যাবি না ?
_(চোখ মুছতে মুছতে উঠে বসল)না মা,যাব না
_কেন? কিছু হয়েছে অফিসে?
_(নিরব)

_কারো সাথে কোনো ব্যাপারে ঝামেলা হইছে?
_(মা কে বলা যাবে না অফিসের বসের সাথে আমার একটু ঝামেলা চলছে,তাহলে আরো চিন্তা করবে) না মা,কারো সাথে কিচ্ছু হয়নি,আমি এখনি রেডি হচ্ছি।তুমি বরং আমাকে গিয়ে তারাতারি কিছু খেতে দাও তো। ছোট একটা বোন,ছোট ভাই আর মাকে নিয়ে পিতৃহীন সংসারের একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যক্তি হচ্ছে রফিক। গরীব হয়ে জন্ম নেয়াটা তার কাছে অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।ছোট একটা অফিসে হিসেব রাখার কাজটি করে রফিক।অভাবের মাঝ থেকেও ছোট ভাইবোন দুটাকে পড়াচ্ছে।প্রাইভেট পড়ানোর সামর্থ্য নেই। অফিস থেকে ফিরে তাই প্রাইভেট পড়ানোর কাজটি ও তাকে করতে হয়।রফিক নিজেও hsc পাশ,স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবে।
এইচ এস সি পাশ হওয়ার পর বাবার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সাথে সাথে তার সেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন গুড়ে যেন বালি পড়ে গেল।অভাব আর দারিদ্রতা তার স্বপ্ন টাকে ভাইবোন দের মাঝে হস্তান্তর করতে বাধ্য করলো। রফিক রেডি, ৩০টাকা পকেটে ডুকিয়ে রওনা দেবে,তখনি ছোট বোন ইরা এসে সামনে দাড়ালো।
_ভাইয়া ভাইয়া,আমাকে জুই এর মত ঐ লাল ড্রেস টা এনে দিবে?
_কোন টা?
_ঐ যে লালটা যেটা পড়ে ওকে পরীর মত লাগছিল
_হুম(কিন্তু ওটা যে অনেক দামি ড্রেস -মনে মনে ভাবছে রফিক)
_ঐ টা পড়লে আমাকেও পরীর মত দেখাবে,তাই না ভাইয়া?
_হুম,তাই তো! আমার ইরাবতী ত পরির চেয়েও সুন্দর দেখতে,তাকে আরো সুন্দর লাগবে। কালই এনে দিব আপু অভাবের হাহাকার টা মনের গভীরে লুকিয়ে ঠোটের কোণে ছোট্ট একটা হাসি নিয়ে তবুও যে বোনের সাথে তাল মিলাতে হবে রফিককে।
সাথে সাথেই মা আসলো -
_কোথায় পাবি তুই লাল ড্রেস কেনার টাকা?
_এইত মা,কাল ই বেতন পাবো
_বেতন মাত্র ক'টা টাকা।ঘর ভাড়া,পানির খরচ, দোকান ভাড়া,রাজিবের(ছোট ভাই)স্কুলের বেতন সবই জমা পড়ে আছে,আবার লাল ড্রেস??
আজ তর বাবা থাকলে তোকে এত কষ্ট করতে হত না,বলতেই কান্না শুরু করে দিল।
_মা, কেদো না তো।আল্লাহ ভরসা, সব হবে, শুধু আমার জন্যে দোয়া করো তুমি।
বলেই বেড়িয়ে এলো রফিক....
_তোমার আজ আসতে এত দেরী হল কেনো?(অনু)
_তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো? দেরি হয়ে গেলো না! চলে গেলে না কেনো??
_প্রায় বছর হয়ে গেল, আমি তোমার জন্যে এখানে দাড়িয়ে থাকি রোজ, কখনো রেখে চলে গেছি?
_(রফিক শান্ত)
_হুম,এইবার চলো।নিশ্চয় অফিসে কোনো ঝামেলা হইছে, কোনো ব্যাপার না!
_ইয়ে মানে! (ও কি করে জানলো?)
_কিছু বলতে হবে না,আমি জানি তোমার কোনো দোষ নেই,কারো কাছে ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয়না বরং মন পরিষ্কার হয়
_হুম
_I love you
_i love you too,সাবধানে যেও,বাই
এভাবেই রোজ অনু আর রফিক হাটতে হাটতে চলে আসে। অফিস আগে তাই রফিককে বিদায় দিয়ে অনু ভার্সিটি চলে যায়। 
রফিকের হাজার কষ্টের মাঝে এই একজনের কাছে তার সকল প্রশান্তির ছায়া।অনেক ভালবাসে অনু কে।মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের অনু,ভেতরে কোনো অহংকার আছে এমন কখনো রফিকের মনে হয় নি।সাদা সিদে মনের অধিকারী অনু,তাইতো রফিক এত ভালবাসে।
প্রতিদিন একই শার্ট পড়ে অনুর সাথে দেখা তবুও বলে না একবার-এটা চেঞ্জ করে পড়ে আসো।উল্টা রফিক নিজেই একদিন বললো -
_এইমাসে বেতন পেয়ে নতুন একটা শার্ট নিতে হবে।
_কেন? তুমার এই শার্ট টা তো এখনো অনেক ভাল,আর তুমাকেও দারুন মানায়
_তাই?
_হুম
সবকিছু এভাবেই মেনে নেয় অনু।
বেতন পেল,সব পরিশোধ শেষে হাতে ৩০০টাকা রয়ে গেল।রফিক ভাবতে লাগলো -এটা দিয়ে অনুকে কিছু কিনে দিব,ওকে আজও কিছু দেয়া হয়নি।মনে পড়ে যায় ছোট বোনের আবদারের লাল জামার কথা।ইরার ড্রেস কেনা এখনো বাকি রয়ে গেল যে!
মায়েরও কাল জ্বর, না না এটা দিয়ে মায়ের ওষুধ কিনতে হবে।
ওষুধ কিনে হাতে আরো ১০০টাকা বাকি! 
অনুকে কিছু না দিতে পারার রাগ,ইরার জন্যে অনুতাপও নিজের দারিদ্রতার জন্যে মনের মাঝে শত কষ্টের হাওয়া বইতে লাগলো -রাগে দুঃখে,অভিমানে পকেটের ১০০টাকা নিয়ে গেল দোকানে। আজ নেশা করবো। সবাই বলে,নেশায় থাকলে কষ্ট ভুলে থাকা যায়
_(১০০ টাকার নোট টা বাড়িয়ে দিয়ে) এই যে ভাই,২টা সিগারেট দেন তো
_ভাংতি নাই,ভাংতি দেন
_ভাংতি কোথায় পাবো? আপনি সিগারেট দেন
_ভাই,ভাংতি নিয়ে আসেন,আমার কাছে খুচরা নাই
দুর নেশা ও করবো না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন